ডিমের ব্যবসার লাভজনক আইডিয়া। ডিমের ব্যবসায় লাভ কেমন

 

আর বর্তমান সময়ে অল্প পুঁজির মধ্যে ডিমের ব্যবসা অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষ সাধারণত সকালে পরোটার সাথে ডিম খেতে চায়। আবার দুপুরবেলায় কিংবা রাতে ভাতের সাথে ডিম ভাজি থাকতেই হবে। ডিম মানুষের পছন্দের খাবার। এবং ডিম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। সচেতন নাগরিকদের ডিমের প্রতি চাহিদা বেশি। বিশেষ করে বাচ্চাদের সকাল বেলা ডিম সিদ্ধ খাওয়ানো হয়।

 

তাই আজ আমি আপনাদের সুবিধার্থে ডিমের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে সে বিষয়গুলো আলোচনা করব। যাতে করে আপনি খুব সহজেই ব্যবসা করতে পারেন। অতএব আপনাকে সম্পূর্ণ লেখাটি পড়তে হবে।

১.ডিমের ব্যবসার ধরন

ডিমের ব্যবসা অনেক আগে থেকেই জনপ্রিয়। যেহেতু ডিম নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের মধ্যে অন্যতম একটি খাদ্য। ডিমের চাহিদা বেশি থাকার কারণে বর্তমান বাজারে ডিমের ব্যবসা মানুষ অনেকভাবে করে থাকে। আমরা নিচে ডিমের ব্যবসার প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। সুতরাং আপনাকে আমাদের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। তাহলে আপনি বর্তমান বাজার অনুযায়ী ডিমের ব্যবসার প্রকারভেদ বিস্তারিত ভাবে জানতে পারবেন।

  • পাইকারি ডিমের ব্যবসা
  • খুচরা ডিমের ব্যবসা
  • সিদ্ধ ডিমের ব্যবসা

আপনাকে ব্যবসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই ব্যবসার ধরন নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কোন ধরনের ব্যবসা করতে চান। উপরোক্ত যে তিনটি ব্যবসা উল্লেখ রয়েছে পাইকারি ডিমের ব্যবসা, খুচরা ডিমের ব্যবসা, সিদ্ধ ডিমের ব্যবসা। আপনি এই তিনটি ব্যবসা থেকে যেকোন একটি বেছে নিতে পারেন।

পাইকারি ডিমের ব্যবসা 

যদি আপনার মূলধন যথেষ্ট পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে আপনি ব্যবসা হিসেবে পাইকারি ডিমের ব্যবসাটি বেছে নিতে পারেন। পাইকারি ডিমের ব্যবসা করার জন্য বেশি পরিমাণে মূলধন থাকা প্রয়োজন। আপনি পাইকারি ডিমের ব্যবসা সঠিক পদ্ধতিতে করতে পারলে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি হবে। আপনি খুব অল্প সময়ে সফলতার মুখ দেখতে পাবেন।

খুচরা ডিমের ব্যবসা 

ডিমের ব্যবসার মধ্যে খুচরা ডিমের ব্যবসাও হচ্ছে একটি লাভজনক ব্যবসা। পাইকারি ডিমের ব্যবসার পরিমাণে খুচরা ডিমের ব্যবসায় মূলধন কম প্রয়োজন হয়। বর্তমান বাজারে খুচরা ডিমের ব্যবসার চাহিদাটও অনেক রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি বিভিন্ন পাইকারি ডিমের ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি যাদের মোরগের ফার্ম রয়েছে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন।

অথবা আপনি সরাসরি যারা মুরগি পালন করে,তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

সিদ্ধ ডিমের ব্যবসা

বর্তমান সময়ে মানুষ খাবার নিজে রান্না না করে বাহির থেকে ক্রয় করে খেতে চায়। ডিমের বেলায় ব্যতিক্রম কিছু নয়। ডিম ক্রয় করে আবার গরম পানিতে সিদ্ধ করার মানসিকতা বর্তমান সময়ে খুব কম মানুষের রয়েছে। এজন্য তারা রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় সিদ্ধ ডিম খাওয়ার জন্য খুঁজে থাকে।

এক্ষেত্রে আপনি চাইলে সিদ্ধ ডিমের ব্যবসা করতে পারেন। সিদ্ধ ডিমের ওপর জনগণের চাহিদা যেহেতু রয়েছে সেক্ষেত্রে আপনি এই ব্যবসায়ী সফল হবেন। একটা কথা সবসময় মাথায় রাখবেন কোন কাজই ছোট নয়।

২.ডিমের পাইকারি বাজার 

ডিমের পাইকারি বাজার রয়েছে ঢাকার কারওয়ান বাজারে। সেখানের বিভিন্ন আরত থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়াও কাপ্তান বাজার, মিরপুর, উত্তরা ইত্যাদি জায়গায়ও ডিম পাইকারিভাবে পাওয়া যায়। তবে এসব বাজার থেকে ডিম কিনলে তেমন একটা লাভ পাওয়া যায় না। সবচেয়ে ভালো হয় যদি সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে ডিম ক্রয় করা যায়।

এজন্য বিভিন্ন খামারের খোঁজ জানতে হবে এবং তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে। গাজীপুর ও সাবার এলাকায় অনেক খামার আছে সেখান থেকে ডিম সংগ্রহ করতে পারেন। আস্তে আস্তে যখন পরিচিতি বাড়বে তখন আপনি বাকিতেও ডিম সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে খামার থেকে অনেক সময় নতুন ব্যবসায়ীদের ডিম দিতে চায় না। কারণ খামারিরা সাধারণত অন্য ব্যবসায়ীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকে।

সেক্ষেত্রে যেসব জায়গায় পাইকারি দামে ডিম পাবেন:-

  • কুরগাও বউবাজার আমতলা আশুলিয়া সাভার, ঢাকা
  • নবীন নগর গুরগাও আশুলিয়া সাভার, ঢাকা
  • (মোঃ)লিটন আলী সিরাজগঞ্জ রোড, সিরাজগঞ্জ (ঢাকার বাহিরে)

৩.বাজার সম্ভাবনা

ডিমের ব্যবসায় বাজার সম্ভাবনা খুব ভালো। দিন দিন ডিমের চাহিদা বাড়ছে। ডিম রান্না খুবই সহজ হওয়াতে এটি খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। দামে সস্তা আর যে কোন ভাজিসহ যেকোন খাদ্যে ব্যবহার করলে খাবারের স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়। টং দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় রেস্টুরেন্টেও ডিম সমানভাবে ব্যবহৃত হয়। বেকারি গুলোতেও ডিমের চাহিদা অনেক।

তাছাড়া এখন হোম মেইড কেকের ব্যবহার বেড়েছে। এই কেকের প্রধান উপাদান হচ্ছে ডিম। ভালো ডিমের পাশাপাশি ফাটা ডিমেরও চাহিদা রয়েছে। ডিমের অনেকগুলো আইটেম করা যায় তার মধ্যে ওমলেট ও মামলেট বেশি জনপ্রিয়। ফাটা ডিম দিয়ে এই দুইটা আইটেম করা যায় তাই বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বেকারি গুলো এই ডিম কম দামে কিনে থাকে।

তবে ফাটা ডিম খুব দ্রুতই বিক্রি করা উচিত বা ব্যবহার করা উচিত। কারণ ফাটা ডিম বেশি সময় পর্যন্ত ভালো থাকে না।

৪.বিক্রি বৃদ্ধির উপায় 

যেকোনো ব্যবসা প্রচারে প্রসার হয়। কাজেই নতুন ব্যবসায় নেমে তার প্রচারণা জোরদার করতে হবে। বিভিন্ন হোটেল, রেস্টুরেন্ট সহ বিভিন্ন টং দোকানের সাথে পরিচিত হতে হবে। অনেকে ছোটখাটো কাজের খোঁজ করে থাকেন আপনি চাইলে তাদেরকে কাজ দিতে পারেন। ঝুড়ী বা ভ্যান গাড়িতে করে ঘুরে ঘুরে ডিম বিক্রির জন্য তাদেরকে রাখতে পারেন।

নিজের লাভ রেখে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে পারলে আস্তে আস্তে ব্যবসার প্রসার ঘটবে।

৫.ডিমের ব্যবসায় সফল হওয়ার কিছু কৌশল

ডিমের ব্যবসা সফল হতে হলে আপনাকে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে এবং কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এবং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সব সময় সৎ থাকতে হবে,গ্রাহকদেরকে ভালো পণ্যগুলো দেয়ার চেষ্টা করবেন। আরো কতগুলো উপায় রয়েছে_

  • ভালো একটি স্থান নির্বাচন করতে হবে এবং জায়গাটি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আকর্ষণীয় রাখতে হবে।
  • ক্রেতাদের সাথে ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং তাদেরকে ভালো সার্ভিস দিতে হবে।
  • গ্রাহকদের মনোযোগ নেওয়ার জন্য তাদের সাথে সুন্দর করে কথা বলতে হবে। কোন উপায়ে যেন গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট না হয়।
  • নিজেকে আধুনিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
  • ব্যবসা বিক্রি বাড়ানোর জন্য আধুনিক আইডিয়াগুলো ব্যবহার করতে হবে।
  •  দোকানের ভাল ডিমগুলো গ্রাহকদের কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে।

৬.প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ 

ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু পরামর্শ অনুসরণ করলে ব্যবসায় সহজেই সফলতা অর্জন করা যায়। যেমন_

১. সঠিক স্থান নির্বাচন

ব্যবসা শুরু করার পূর্বে প্রথমেই আপনার কাজ হচ্ছে সঠিক একটি জায়গা নির্বাচন করা। কোথায় আপনি ব্যবসা করবেন এবং সেই জায়গায় মানুষের আনাগোনা কেমন। সবদিক বিবেচনায় রেখে আপনাকে স্থান নির্বাচন করতে হবে।

২.অনুমতি সংগ্রহ

ব্যবসা করতে হলে জায়গার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে অবশ্যই আপনাকে অনুমতি নিতে হবে। অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে। অনুমতি না নিয়ে ব্যবসা শুরু করলে পরবর্তী সময়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। জরিমানা দেওয়া লাগবে বা দেখা যেতে পারে ব্যবসা বন্ধ করতে হয়।

৩. ব্যবসার ধরন 

আপনি কোন ধরনের ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন,  পাইকারি ব্যবসা নাকি খুচরা ব্যবসা। ব্যবসার ধরনটি আগে চিন্তাভাবনা করে নির্ধারণ করতে হবে।

৪. একটু ভিন্নতা

খেয়াল রাখুন আপনার আশেপাশের ব্যবসায়ীরা কোন ধরনের ব্যবসা করছে। আপনি চেষ্টা করবেন তাদের থেকে একটু আলাদা টাইপের কোন ব্যবসা শুরু করার। নতুন কিছুর ব্যবসা করলে আপনি সহজেই লাভবান হবেন।

৫. পণ্য নির্বাচন ও গবেষণা 

অন্যের গুনাগুন, মান, চাহিদা এবং বাজারের অবস্থা বুঝে ব্যবসা শুরু করতে হবে। বিশেষ করে কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ব্যবসায় আনতে হবে। জীবনযাত্রার উপর নির্ভরশীল পণ্য বেছে নিতে পারেন ব্যবসায়ের জন্য। তাতে আপনার ব্যবসার সহজেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবে।

৬.বিজ্ঞাপন

সকল ব্যবসা শুরু করার পর নতুন অবস্থায় বিজ্ঞাপন বা প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে প্রচার করার জন্য আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারেন। এবং অবশ্যই নিজের ব্যবসা একটি সাইনবোর্ড দিয়ে শুরু করবেন, এটাও কিন্তু এক ধরনের প্রচার।

 

শেষকথা,উপরে ডিমের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে আলোচনা করলাম । ডিমের ব্যবসা খুব লাভজনক একটা ব্যবসা। সুতরাং আপনি যদি উপরোক্ত কথাগুলো মাথায় রেখে ফলের ব্যবসা শুরু করেন। তাহলে আপনি লাভবান হতে পারবেন।

ডিমের ব্যবসায় লাভ কেমন এ নিয়ে আশা করি তেমন কোন প্রশ্ন নেই।  ডিমের ব্যবসা নিয়ে আরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে, কমেন্ট করে আমাদের জানান।

Sharing Is Caring:

Leave a Comment